প্রসঙ্গঃ অটলবিহারি বাজপেয়ী
অটলবিহারি বাজপেয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলেন কি না, কিংবা তিনি ব্রিটিশের গুপ্তচর ছিলেন কি না, জানি না। কিন্তু এটা বেশ মনে করতে পারি যে, বাবরি মসজিদ ভাঙার ‘আন্দোলন’এ তাঁর ভূমিকা এল কে আদবানি, অশোক সিংঘল বা উমা ভারতীদের চেয়ে কিছু কম ছিল না।
বাবরি ভাঙার কথা উঠলেই নরসিমহা রাও (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী), কল্যাণ সিং (উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী), অশোক সিংঘল (বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান), আদবানি, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার প্রমুখকে নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বাদ পড়ে যান অটলবিহারি বাজপেয়ী। অথচ রামমন্দির আন্দোলনের শুরু থেকেই বাজপেয়ী ছিলেন প্রথম সারিতে। ওই আন্দোলনে আদবানি-সিংঘল স্ট্রাইকার, উমা-বিনয়’রা উইংগার হলে, বাজপেয়ী ছিলেন মিডফিল্ডার, স্কিমার। আদবানিরা গোল করেছেন। কিন্তু একটু নীচে থেকে খেলাটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। রথযাত্রায় আদবানি ছাড়া অন্য কাউকে মানাত না। যেমন ‘নায়ক’-এ উত্তমকুমারের জায়গায় অনুপকুমার থাকলে ছবিটা জমত না! আসল কৃতিত্ব কিন্তু সত্যজিতের।
১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি ভাঙা হয়। তার আগে বেশ কয়েক দিন ধরে অকুস্থলে লাগাতার সভা-সমাবেশ করেছিলেন বিজেপি ও সংঘ পরিবারের তাবড় নেতানেত্রীরা। বাজপেয়ীও ছিলেন আগাগোড়া, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ৫ ডিসেম্বর লখনউয়ের কাছে আমিনাবাদের ঝান্ডেওয়াল পার্কের সমাবেশে তাঁর বক্তৃতা শুনুনঃ
“...এমন কি, সুপ্রিম কোর্টও করসেবা বন্ধ করতে পারবে না। সত্যি বলতে কী, আদালতই আমাদের করসেবার রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছে। অযোধ্যা য় করসেবা করলে আমাদের আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হবে না। বরং করসেবা করলেই শীর্ষ আদালতের রায়কে মান্যতা দেওয়া হবে।
লখনউ বেঞ্চের রায় বেরোনোর আগে পর্যন্ত কোর্ট আমাদের নির্মাণকাজ করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু তারা বলেছে, আমরা সেখানে ভজন, কীর্তন করতে পারি। ভজন এক জনে করা যায় না। অনেকে মিলে করতে হয়। কীর্তন করতে তো আরও বেশি লোক লাগে। এবং ভজন-কীর্তন দাঁড়িয়ে করা যায় না। বসে করতে হয়। কিন্তু জায়গাটা তো সূচালো পাথরে ভরা, সেখানে বসে কিছু করতে গেলে আগে জমিটা সমান করতে হবে। যজ্ঞের আয়োজন করতে হবে। যজ্ঞ করার জন্য আমাদের একটা বেদি বানাতে হবে।... কাল যে কী হবে, আমি জানি না...। আমি অযোধ্যাতেই যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে দিল্লিতে যেতে বলা হয়েছে।” লিবারহান কমিশন এই বক্তব্যকে উসকানিমূলক বলে অভিযুক্ত করেছিল বাজপেয়ীকে। ঠিকই করেছিল। কিন্তু বাজপেয়ীর যুক্তি ছিল, ‘হালকা চালে বলেছিলাম। উসকানি তো কিছু ছিল না...।” আপনাদেরও কি তা-ই মনে হয়, বন্ধুরা?
সেই সময় বাবরি মসজিদ ভাঙার জমি তৈরি করার জন্য এক দিকে যেমন একটানা উসকানিমূলক ভাষণ চলছিল, অন্য দিকে তেমনই ইমারত ভাঙার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছিল করসেবক’দের।
বিবিসি’র রিপোর্ট কী বলছে, দেখা যাক।
বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রস্তুতি চলছিল আগে থেকেই এবং ঘটনার আগের দিন একদল হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক এটির 'ড্রেস রিহার্সেল' দিয়েছিল। আলোকচিত্র সাংবাদিক প্রভীন জৈন ছবি তোলার জন্য এই হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকদের অনুসরণ করছিলেন। সেদিনের ঘটনার অনেক ছবিও তুলেছেন তিনি। প্রভীন জৈন বিবিসির কাছে বর্ণনা করেছেন সেদিনের ঘটনাবলী:
“আমি অযোধ্যা এসে পৌঁছাই ১৯৯২ সালের ৪ ডিসেম্বর। সেই সন্ধ্যায় অযোধ্যা ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন।
আমি তখন 'দ্য পাইওনীয়ার' পত্রিকায় কাজ করি। তারা আমাকে এই অ্যাসাইনমেন্টে পাঠিয়েছে। হিন্দু কর সেবক এবং উগ্রপন্থী হিন্দু নেতাদের যে দলটি বাবরি মসজিদ চত্ব্বরে সমবেত হবে, আমাকে তাদের ছবি তুলতে হবে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) হাজার হাজার কর্মী তখন সেখানে জড়ো হয়েছে। এই দলটি ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। ভারতে যে সব হিন্দু দল এবং গোষ্ঠী সক্রিয়, তাদের আদর্শগত নেতৃত্বে আছে এই আরএসএস। এসব দলের মধ্যে আছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিও, যারা এখন ভারতের শাসনক্ষমতায়।
হিন্দু গোষ্ঠীগুলো মনে করে বাবরি মসজিদ যেখানটায় তৈরি করা হয়েছে, সেটি আসলে হিন্দু দেবতা রামের জন্মভূমি। মসজিদের কাছে তারা একটি হিন্দু মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করছিল। হিন্দু নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা মসজিদ স্পর্শ করবেন না। আর তাদের কর্মসূচী মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং সেখানে একটি ধর্মীয় প্রার্থনা আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
একজন বিজেপি এমপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, ৫ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার একটা মহড়া হবে।
তিনি আমাকে আরও জানিয়েছিলেন, শীর্ষ নেতারা তাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এই মহড়ায় যেন সাংবাদিকরা কোনভাবেই হাজির থাকতে না পারে।
তিনি আমাকে বললেন,"তবে আপনি আমার বন্ধু এবং আমি আপনাকে বন্ধু হিসেবে এই তথ্যটা দিলাম।”
“আমি তখন ছদ্মবেশে এই হিন্দু করসেবকদের সঙ্গে মিশে গেলাম। আমার মাথায় পট্টি বাঁধা, গায়ে গেরুয়া রঙের স্কার্ফ। জ্যাকেটের গায়ে সাঁটা একটা ব্যাজ, যা দেখে সবাইকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হবে। মসজিদের অল্প দূরেই একটা ফুটবল মাঠের সমান একটা জায়গায় সবাই জড়ো হচ্ছিল। আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো। হাজার হাজার মানুষ তখন সেখানে জড়ো হয়েছে যাদের সবার মাথায় পট্টি বাঁধা এবং গায়ে গেরুয়া বসন। ব্যাজ পরা হিন্দু করসেবকরা পুরো জায়গাটি ঘিরে রেখেছে।
যে আমাকে সেখানে ঢুকতে সাহায্য করেছিল, সে আমাকে বলেছিল, একমাত্র এভাবেই আপনি এই মহড়ার ছবি তুলতে পারবেন। "আমার কাছাকাছি থাকুন, অন্য করসেবকদের মতো শ্লোগান দিন, ওদের সঙ্গে মিশে যান। এতে করে আপনি নিরাপদও থাকবেন।"
তবে আমি হঠাৎ দেখলাম একটা মোটাসোটা লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ক্যামেরা বন্ধ করতে বলছে। আমি আমার বুকে লাগানো ব্যাজ দেখিয়ে আর সবার মতো জোরে জোরে শ্লোগান দিতে থাকলাম। তখন লোকটি মাথা ঝাঁকিয়ে দূরে দাঁড়ানো একদল মানুষের কাছে যেতে ইঙ্গিত করল।
কিন্তু আমি আমার ক্যামেরায় ছবি তুলতে শুরু করলাম। আমার সামনে তখন অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটে চলেছে।
শাবল, কুড়াল, বেলচা এবং লোহার রড নিয়ে তখন লোকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তারা এক বিরাট মাটির ঢিবি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করছে।
সবকিছুই ঘটছিল খুব পরিকল্পিত এবং সুচারুভাবে। এদের দেখে মনে হচ্ছিল না তারা কেবল স্বেচ্ছাসেবক, যেভাবে পেশাদারী কায়দায় তারা কাজ করছিল তাতে মনে হচ্ছিল কিভাবে একটা বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলতে হবে সেটা তারা ভালোভাবেই জানে।
ভারত সরকারের নিয়োগ করা যে লিবারহান কমিশন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা তদন্ত করেছিল, ২০০৯ সালে তারা তাদের রিপোর্টে এই মহড়ার কথা উল্লেখ করেছিল।
এতে বলা হয়েছিল, "কমিশনের কাছে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে বিতর্কিত এই কাঠামোটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য একটি মহড়া দেয়া হয়েছিল। কমিশনের কাছে এর কিছু ছবিও জমা পড়েছে। তবে এটি ভাঙ্গার জন্য কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল কিনা, তার নিশ্চিত প্রমাণ নেই। যদিও কিছু অবস্থাগত প্রমাণ এবং কিছু সাক্ষ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে করসেবকদের এটি ভাঙ্গার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।"
আমি একটা লোকের ছবি তুলেছিলাম, যার মুখ রুমালে ঢাকা ছিল। সবার মধ্যে একমাত্র সেই তার মুখটি আড়াল করে রেখেছিল। মাটির ঢিবিটা যারা ধ্বংস করে সরিয়ে নিচ্ছিল, লোকটি চিৎকার করে তাদের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিল।
একটি দক্ষিণপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীর নেতা গোছের বলে মনে হচ্ছিল তাকে। সেজন্যেই সে তার পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছিল না।
মাটির ঢিবিটা শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হলো। হিন্দু করসেবকরা এরপর সোল্লাসে চিৎকার করতে লাগলো।
আমি জ্যাকেটের মধ্যে আমার ক্যামেরা লুকিয়ে ফেললাম এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি তখনো লোকজনের সঙ্গে শ্লোগান দিচ্ছিলাম। কিন্তু আমার ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। আমিই হচ্ছি একমাত্র আলোকচিত্র সাংবাদিক, যে এই ঘটনার ছবি তুলতে পেরেছি।
পরের দিন বাবরি মসজিদের কাছেই একটি ভবনের চার তলায় আমরা সাংবাদিকরা অবস্থান নিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাবরি মসজিদ দেখা যায়। সেখানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিজেপির নেতারা যে সভামঞ্চ তৈরি করেছেন, সেটিও চোখে পড়ে। প্রায় দেড় লাখ হিন্দু করসেব সেখানে জড়ো হয়েছে।
সেখানে থাকা পুলিশ পর্যন্ত করসেবকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিল। দুপুরের একটু পর জনতা উন্মত্ত হয়ে উঠলো। যে পুলিশ বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা মসজিদ ঘিরে রেখেছিল, তাদের বেষ্টনি ভেঙ্গে ফেললো জনতা।
কিছু লোক আমরা যে ভবনে ছিলাম, তার চার তলায় উঠে এলো। তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালালো। ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেললো। কয়েক মিটার দূরেই যে মসজিদ ভাঙ্গার কাজ চলছে, সেটার কোন 'ফোটোগ্রাফিক' প্রমান যেন না থাকে।
মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হলো বাবরি মসজিদ।
আমি দৌড়াতে দৌড়াতে আমার হোটেলে ফিরে এলাম।
ততক্ষণে দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। আমি চারিদিকে পুলিশের সন্ধান করছিলাম, যারা সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু লোকজন তখন দোকান বন্ধ করছে, বাড়ির দরোজায় খিল দিচ্ছে। জানালা বন্ধ করছে।
যেদিন এভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হলো, একজন হিন্দু হয়ে আমি সেদিন লজ্জিত বোধ করছিলাম।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা তদন্ত করে যে 'লিবারহান কমিশন' তার সামনে আমি সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। এই মামলার শুনানি চলছে যে বিশেষ আদালতে, সেখানে এখনো মাঝে মধ্যে আমাকে ডেকে পাঠায় সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (সিবিআই)।
২৫ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছিল, এখনো পর্যন্ত তাদের কারও সাজা হয়নি।”
[প্রভীন জৈন এখন ভারতের 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' পত্রিকার এসোসিয়েট ফটো এডিটর। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসির অনসুয়া বসু।]
‘কোবরা পোস্ট’-এর স্টিং অপারেশনেও প্রমাণিত পরিষ্কার তথ্য মেলে যে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা কোনও আকস্মিক ব্যাপার ছিল না। পরিকল্পনামাফিকই ব্যাপারটা ঘটানো হয়েছিল। যার জেরে দেশব্যাপী দাঙ্গায় মৃত্যু হয় কয়েক হাজার নিরীহ মানুষের।
কোবরা’র হুল বেঁধা থেকে কী জানা গিয়েছিল? দেখা যাক।
রামজন্মভূমি আন্দোলনের গবেষণাধর্মী ইতিহাস রচনার নামে কোবরাপোস্টের অ্যাসোসিয়েটেড এডিটর অযোধ্যা, ফয়জাবাদ, মথুরা, লক্ষ্ণৌ, মোরাদাবাদ, মুম্বই, গোয়ালিয়র-সহ ১১টি জায়গা ঘুরে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ২৩ জন নেতার সঙ্গে কথা বলেন৷
তাঁদের কথোপকথনের গোপন রেকর্ডিং-এর ভিত্তিতে দাবি করা হয়, ‘অপারেশন জন্মভূমি' নামে বাবরি মসজিদ ভাঙার ছক কষা হয়েছিল অনেক আগে থেকে।
ধ্বংসকাণ্ড যাতে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা হয়, তার জন্য সংঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখার ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নিয়ে তাঁদের ঐ কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল লোকচক্ষুর আড়ালে৷ ‘লক্ষ্মণ সেনা' নামে ঐ ৩৮ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মী৷ প্রথম চেষ্টায় যদি বাবরি মসজিদ ভাঙা না যায়, তাহলে দ্বিতীয় বিকল্প ছিল ডিনামাইট ব্যবহার করা৷ এই চক্রান্তের কথা জানতেন লালকৃষ্ণ আডবানি, উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-সহ বিজেপির কিছু শীর্ষ নেতা৷ শুধু তাই নয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও নাকি পরিকল্পনার কথা টের পেয়েছিলেন. কিন্তু ঠেকাবার কোনো কড়া পদক্ষেপ নেননি – এমনও অভিযোগ করা হয়৷
এই প্রসঙ্গে এক উর্দু সংবাদপত্রের সম্পাদক মনে করেন, বাবরি মসজিদ এমন প্রযুক্তিতে তৈরি, যা ধ্বংস করা সাধারণ লোহার রড, শাবল, কোদাল, গাঁইতির দ্বারা সম্ভব নয়৷ ব্যবহার করা হয়েছিল কম শক্তির বিস্ফোরক, যার জন্য দরকার হয়েছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞের৷
এত কিছু পরিকল্পনা, কর্মকাণ্ড, প্রশিক্ষণ— সব হয়েছিল দলের প্রতিষ্ঠাতা কাম শীর্ষনেতা কাম কাণ্ডারী অটলবিহারি বাজপেয়ীকে না জানিয়ে, তাঁকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে, অগোচরে? এটা কি মেনে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে?
আমাদের অবশ্য এর উলটোটাই সত্যি বলে মনে হয়। অর্থাৎ, তিনি সব জানতেন শুধু নয়, রামমন্দির আন্দোলনের কাহিনী-চিত্রনাট্য-সংলাপ-সংগীত এবং পরিচালনার অন্যতম মূল দায়িত্বই ছিল তাঁর। ওই ‘নায়ক’ সিনেমার মতোই— রামমন্দির আন্দোলনে আদবানি ‘উত্তমকুমার’ হলে বাজপেয়ী ছিলেন সত্যজিৎ!
রাম জন্মভূমিতে সেই যে সাম্প্রদায়িক হিংসার বীজ পোঁতা হল, তা থেকেই জন্ম হল বিষবৃক্ষের। আজ সেই গাছটাই ডালপালা মেলে গোটা ভারত ছেয়ে ফেলেছে। বিষের বলিও তো কম হচ্ছে না। এর দায় থেকে কি বাদ রাখা হবে বাজপেয়ীকে?
No comments:
Post a Comment