Monday, September 3, 2018

বাংলা সিরিয়ালের সমস্যা

ভয়াবহ পরিস্থিতি...
কেন বন্ধ বাংলা সিরিয়াল ? কী কী দাবি তুলেছেন কলাকুশলীরা ?
বাংলা বিনোদনের প্রত্যেকটি চ্যানেলেই আপাতত বন্ধ থাকছে সিরিয়াল৷ তবে জানা গিয়েছে, টাইমস্লট জিইয়ে রাখতে বেশিরভাগ সিরিয়ালের পুরনো এপিসড রিপিট হিসেবে দেখানো হবে ৷
কলকাতা: বন্ধ বাংলা সিরিয়াল ৷ টেলিভিশন জুড়ে সকাল থেকে বিকেল, সন্ধে থেকে রাত অবধি চলা একের পর সিরিয়ালে এবার ক্ষণিকের ইতি ৷ খবর অনুযায়ী, সোমবার বন্ধ থাকবে সিরিয়ালের সম্প্রচার ৷
এক নজরে কলাকুশলীদের দাবি--
১। প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বেতন
২। বকেয়া বেতন দিয়ে দিতে হবে
৩। শিল্পীরা সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা কাজ করবেন
৪। ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে ঘণ্টাপ্রতি টাকা
৫। ৩০ জুন পর্যন্ত বকেয়া টাকা মেটাতে হবে
বাংলা বিনোদনের প্রত্যেকটি চ্যানেলেই আপাতত বন্ধ থাকছে সিরিয়াল৷ তবে জানা গিয়েছে, টাইমস্লট জিইয়ে রাখতে বেশিরভাগ সিরিয়ালের পুরনো এপিসড রিপিট হিসেবে দেখানো হবে ৷
বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবিতেই টানা তিন দিন ধরে টালিগঞ্জে বন্ধ রয়েছে বহু জনপ্রিয় মেগা সিরিয়ালের শ্যুটিং। রবিবার সমাধানের খোঁজে আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকরা বৈঠকও করেন। কিন্তু তাতেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি । আর যার জেরেই রবিবারেও বন্ধ রয়েছে মেগা সিরিয়ালের শ্যুটিং।
আর্টিস্ট ফোরামের অভিযোগ অনুযায়ী, বেশ কিছু মেগা সিরিয়ালের অভিনেতাদের পারিশ্রমিক বকেয়া পড়ে রয়েছে। সেগুলি না মেটানো পর্যন্ত শ্যুটিয়ে অংশ নেবেন না কোনও অভিনেতা-অভিনেত্রী।
আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে অভিনেতা–অভিনেত্রীদের জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কল টাইমে মেকআপ করে শ্যুটিং ফ্লোরে গেলেও সহ অভিনেতা অভিনেত্রীদের বকেয়া পারিশ্রমিক না মেটা পর্যন্ত তাঁরা শ্যুটিং করতে পারবেন না। রবিবার এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে মুখোমুখি হয়েছিল আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকরা। কিন্তু তাতে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। সেই সমাধানের খোঁজেই ফের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক করবে প্রযোজকরা ৷ এমনকী, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ আর্টিস্ট ফোরামের সকল সদস্যদের নিয়ে বৈঠকেও বসার কথা রয়েছে ৷
তবে এই ঘটনা প্রথম নয়, গত মাসেও বাংলা সিরিয়ালের শিল্পী সংগঠন বা আর্টিস্ট ফোরামের সদস্যের প্রতিবাদের জেরে বন্ধ ছিল সিরিয়ালের শ্যুটিং ৷ তাঁদের অভিযোগ গভীর রাত পর্যন্ত শ্যুটিং চলে। কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। কাজের সময় বেঁধে দিতে হবে। এরকম একগুচ্ছ দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছে তারা। এই নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে শিল্পীদের সংগঠন।
---
কৈফিয়ত-১।।
সিরিয়ালের গুণমান এখানে বিবেচ্য বিষয়ই নয়। আসল সমস্যাটা শ্রমের, শ্রমিকের, মজুরির। ‘খাটছি অথচ পয়সা পাচ্ছি না’— সমস্যা বলতে এটাই। সিরিয়ালের বিষয়বস্তু কী হবে, তা অভিনেতা-অভিনেত্রী তো কোন ছাড়, এমনকী, পরিচালকেরও হাতে থাকে না, প্রায়শই।
আর সিরিয়াল বন্ধ হলে? তখন বিজ্ঞাপন দেখার জন্য কি লোকে বসে থাকবে টিভির সামনে? বিজ্ঞাপন দেখাতে হলে সিরিয়াল চালাতে হবে। তা ছাড়া কালো টাকা সাদা করার চাপ আছে।
সিরিয়াল কেন ভালো হয় না, তার কারণ অনেক এবং তর্কটাও একেবারেই আলাদা। আর শুধু সিরিয়াল ভালো হয় না, তা তো নয়। ক’টা সিনেমা, নাটক, গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রতিবেদন ভালো হয়? ক’টা খেলা ভালো হয়? ক’টা দল, সংস্থা, রাজনৈতিক সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভালো হয়? ক’টা সম্পর্ক, প্রেম, সংসার, চাকরি ভালো হয়? ক’টা মন্ত্রী, আমলা, সরকার, ডাক্তার, মিস্তিরি, কাজের লোক, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু ভালো হয়?
আসলে ভালো-মন্দের ওপর কিছু নির্ভর করে না। ব্যাপারটা লাভজনক কি না, এটাই আসলি বাত। অনেক টি আর পি থাকা সত্ত্বেও সিরিয়ালগুলো যথেষ্ট মুনাফা নিশ্চয়ই দিচ্ছে না। তাই খরচ কাটছাট। আর সব শিল্পের মতো এই বিনোদন শিল্পেও সবার আগে কোপ শ্রমিক কলা-কুশলীদের ওপরই। আশ্বিনের শারদপ্রাতে যতই গলা কাঁপাও, যতই মঞ্চ আলোকিত করো না কেন— হে কলাকুশলী, শিল্পী— আদতে তুমি শ্রমিক, কর্মচারী। তোমার ওজনও সেই দাঁড়িপাল্লাতেই হবে, যেখানে কিছুক্ষণ আগে তোলা হয়েছিল কোনও বিড়িশ্রমিক বা পাথর খাদানের কর্মচারীকে!
---
কৈফিয়ত-২।।
একটা ভালো নাটক সিনেমা বা সিরিয়াল বানাতে এক জন প্রতিভাবান লোকের লাগে প্রয়োজনীয় মালমশলা, টাকা আর বক্তব্য প্রকাশের পরিসর। সেটা কি আছে?
ধরা যাক, কেউ মনে করল সে নিজের টাকাতেই ছবি বানাবে। বাস্তবকে তুলে ধরবে শিল্পের আঙ্গিকে। ছবে বানানো হবে সুভাষ চক্কোত্তির ‘অপারেশন সানশাইন’, নন্দীগ্রামে জমির লড়াইয়ের অন্তরালে, কিষেণজির সান্ধ্য ফোন-ইন এবং মৃত্যু, ছত্রধর মাহাতের উত্থান-পতন, কিংবা টলিউডে বাংলা সিরিয়াল কী ভাবে তৈরি হয়, পরিচালক-অভিনেতা অভিনেত্রীদের একদিন-প্রতিদিন, ভারত সেবাশ্রম, মাদার টেরেজা, মাদ্রাসা বা মুসলিম সেমিনারি ও সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘর বা রামকৃষ্ণ মিশনের সমাজসেবার অজানা গপ্পো, কাশ্মীরে সেনা অভিযান, মণিপুরে থাংসাম মনোরমার দিনলিপি, এক বাস ড্রাইভার বা কনডাক্টরের সারাদিন, ডুয়ার্সে জঙ্গল সাফ ও কাঠ পাচার, উন্নয়নের নামে কংক্রিটের সমাজ, শিল্পের নামে বিদেশ সফর, ছত্তিশগড়ে মাও’রাজ, বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ, তিরুপতি কিংবা পদ্মনাভ মন্দিরের সোনাদানা, ধর্ম ও রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বিষয়আশয়, জীবনযাত্রা— ইত্যাদি হরেকরকম্বা বিষয় নিয়ে। চালু ব্যবস্থায় করা যাবে কি— এসব সিরিয়াল সিনেমা ডকুমেন্টারি? কী মনে হয়?

No comments:

Post a Comment