প্রসঙ্গঃ রূপা গাঙ্গুলি...
অভিনেত্রী কাম নেত্রী রূপা গাঙ্গুলি’কে যারা ট্রোল করছেন, তাঁদের উদ্দেশে কয়েকটা কথা বলা দরকার।
প্রথমত, বিজেপি’র নেত্রী হিসেবে এবং সংঘের অনুগত হিসেবে রূপা যে মন্তব্য করেছেন, তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কারণ, ‘এ পার’টা হিন্দুদের আর ‘ও পার’টা মুসলমান’দের— এটা না বলতে পারলে বিজেপি করা চলে না।
দ্বিতীয়ত, হিন্দুত্বের ধারণাটা তৈরি করেছে এবং প্রচার করেছে আরএসএস। সাভারকার, হেডগাওয়ার, গোলওয়ালকার প্রমুখের গোলগোল লেখার সারসংকলন করে সুদর্শনরা ‘হিন্দুত্ব’ সম্পর্কে যা বলেছিলেন, তা হলঃ
১। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত ভূমি’কে যারা পিতৃভূমি (খেয়াল করুন, মাতৃভূমি নয়) তথা পুণ্যভূমি বলে মনে করেন, তাঁরাই হিন্দু।
২। যারা রাম’কে দেবতা বা জাতীয় বীর নায়ক হিসেবে মেনে নেন, তাঁরা হিন্দু।
অর্থাৎ, যারা এই দুটো শর্ত মানেন না, তাঁরা হিন্দু নন।
তৃতীয়ত, ভারতবর্ষ হিন্দুর দেশ। এখানে একটি মাত্র হিন্দু সংস্কৃতি (পড়ুন, ‘হিন্দুত্ব)-ই চলবে। তার বাইরে যাহা বাহান্ন তাহাই ছাপ্পান্ন, অর্থাৎ যাহা বিধর্মী, তাহাই বহিরাগত।
হিন্দুত্বের এহেন মাপকাঠিতে ভারতবর্ষীয় মুসলমান, খ্রিস্টান’দের জন্ম এই ভূখণ্ডে হলেও তাঁরা ‘বহিরাগত’। কারণ, তাঁরা যদি ‘ধার্মিক’ হন, তা হলে এই দেশকে একাধারে ‘পিতৃভূমি ও পুণ্যভূমি’ হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। কেন না, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁদের ‘পুণ্যভূমি’ ভারতীয় ভূখণ্ডের বাইরে, জেরুজালেম কিংবা মক্কা-মদিনায়। ফলে তাঁরা কখনই ‘হিন্দু’ হতে পারবেন না।
আরএসএস-এর এই যুক্তি কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা কাল্পনিক তত্ত্বের ওপর। সেটা হলঃ ভারতের ইতিহাস হল হিন্দুর সঙ্গে মুসলমানের সংগ্রাম। হিন্দুরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে মুসলমানদের সঙ্গে লড়াই করে। কোন লড়াই? না, মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে পৃথ্বীরাজ চৌহানের। বাবরের সঙ্গে সংগ্রাম সিংহের। আকবরের সঙ্গে রানাপ্রতাপের। ঔরংজেবের সঙ্গে শিবাজির।
ওই যুদ্ধগুলো হয়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তা কখনই হিন্দু বনাম মুসলমান ছিল না। ছিল দুই সাম্রাজ্যবাদী শাসকের লড়াই। ইতিহাসের তথ্য সে কথাই বলে। তবু তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করে একটা মিথ বানানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে ‘হিন্দুত্ব’-এর একটা তাত্ত্বিক ভিত।
মাধ্যমিকের পড়াশোনা আর সামান্য কাণ্ডজ্ঞান থাকলে যে কেউ সঙ্ঘনেতাদের এই কুযুক্তি ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু সঙ্ঘের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা যে করছে, তাকে এটা মুখস্থ করতেই হবে। রূপা সেটা করেছেন। কেন না, স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করার পেশাদারি দক্ষতা তাঁর আছে। শিক্ষিত হিন্দুদের মধ্যে তো বটেই, এমনকী, ‘প্রগতিশীল’ নামধারী মুসলমান সমাজেরও তো অনেককে দেখা যাচ্ছে ভুলভাল সংঘশিক্ষা অনায়াসে গলাঃধকরণ করতে, সহজপাচ্য না হওয়া সত্ত্বেও।
রূপা’কে ট্রোল করা তাই পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছু নয়। তার চেয়ে চলুন, আরএসএস বিরচিত ও নির্মিত হিন্দুত্বের মিথ’টাকে ধসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা যাক।
sudip moitra
প্রথমত, বিজেপি’র নেত্রী হিসেবে এবং সংঘের অনুগত হিসেবে রূপা যে মন্তব্য করেছেন, তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কারণ, ‘এ পার’টা হিন্দুদের আর ‘ও পার’টা মুসলমান’দের— এটা না বলতে পারলে বিজেপি করা চলে না।
দ্বিতীয়ত, হিন্দুত্বের ধারণাটা তৈরি করেছে এবং প্রচার করেছে আরএসএস। সাভারকার, হেডগাওয়ার, গোলওয়ালকার প্রমুখের গোলগোল লেখার সারসংকলন করে সুদর্শনরা ‘হিন্দুত্ব’ সম্পর্কে যা বলেছিলেন, তা হলঃ
১। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত ভূমি’কে যারা পিতৃভূমি (খেয়াল করুন, মাতৃভূমি নয়) তথা পুণ্যভূমি বলে মনে করেন, তাঁরাই হিন্দু।
২। যারা রাম’কে দেবতা বা জাতীয় বীর নায়ক হিসেবে মেনে নেন, তাঁরা হিন্দু।
অর্থাৎ, যারা এই দুটো শর্ত মানেন না, তাঁরা হিন্দু নন।
তৃতীয়ত, ভারতবর্ষ হিন্দুর দেশ। এখানে একটি মাত্র হিন্দু সংস্কৃতি (পড়ুন, ‘হিন্দুত্ব)-ই চলবে। তার বাইরে যাহা বাহান্ন তাহাই ছাপ্পান্ন, অর্থাৎ যাহা বিধর্মী, তাহাই বহিরাগত।
হিন্দুত্বের এহেন মাপকাঠিতে ভারতবর্ষীয় মুসলমান, খ্রিস্টান’দের জন্ম এই ভূখণ্ডে হলেও তাঁরা ‘বহিরাগত’। কারণ, তাঁরা যদি ‘ধার্মিক’ হন, তা হলে এই দেশকে একাধারে ‘পিতৃভূমি ও পুণ্যভূমি’ হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। কেন না, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁদের ‘পুণ্যভূমি’ ভারতীয় ভূখণ্ডের বাইরে, জেরুজালেম কিংবা মক্কা-মদিনায়। ফলে তাঁরা কখনই ‘হিন্দু’ হতে পারবেন না।
আরএসএস-এর এই যুক্তি কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা কাল্পনিক তত্ত্বের ওপর। সেটা হলঃ ভারতের ইতিহাস হল হিন্দুর সঙ্গে মুসলমানের সংগ্রাম। হিন্দুরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে মুসলমানদের সঙ্গে লড়াই করে। কোন লড়াই? না, মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে পৃথ্বীরাজ চৌহানের। বাবরের সঙ্গে সংগ্রাম সিংহের। আকবরের সঙ্গে রানাপ্রতাপের। ঔরংজেবের সঙ্গে শিবাজির।
ওই যুদ্ধগুলো হয়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তা কখনই হিন্দু বনাম মুসলমান ছিল না। ছিল দুই সাম্রাজ্যবাদী শাসকের লড়াই। ইতিহাসের তথ্য সে কথাই বলে। তবু তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করে একটা মিথ বানানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে ‘হিন্দুত্ব’-এর একটা তাত্ত্বিক ভিত।
মাধ্যমিকের পড়াশোনা আর সামান্য কাণ্ডজ্ঞান থাকলে যে কেউ সঙ্ঘনেতাদের এই কুযুক্তি ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু সঙ্ঘের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা যে করছে, তাকে এটা মুখস্থ করতেই হবে। রূপা সেটা করেছেন। কেন না, স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করার পেশাদারি দক্ষতা তাঁর আছে। শিক্ষিত হিন্দুদের মধ্যে তো বটেই, এমনকী, ‘প্রগতিশীল’ নামধারী মুসলমান সমাজেরও তো অনেককে দেখা যাচ্ছে ভুলভাল সংঘশিক্ষা অনায়াসে গলাঃধকরণ করতে, সহজপাচ্য না হওয়া সত্ত্বেও।
রূপা’কে ট্রোল করা তাই পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছু নয়। তার চেয়ে চলুন, আরএসএস বিরচিত ও নির্মিত হিন্দুত্বের মিথ’টাকে ধসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা যাক।
sudip moitra
https://www.youtube.com/watch?v=0M84jp2a7rI
No comments:
Post a Comment