Monday, September 3, 2018

প্রসঙ্গঃ দেবব্রত বিশ্বাস

।। প্রসঙ্গঃ দেবব্রত বিশ্বাস।।
(২২ অগস্ট ১৯১১ – ১৮ অগস্ট ১৯৮০)
"জর্জ (দেবব্রত বিশ্বাস) তখন দাড়ি রাখছেন। গেরুয়া লুঙ্গি, ফতুয়া। হাতের লাঠিটা সর্বক্ষণের সঙ্গী। রোগ-জর্জর শরীর নিয়ে ইজিচেয়ারে শুয়ে বাইরে আকাশ দেখছেন। উত্তমকুমার এলেন শিল্পী-সংসদের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে। জর্জ বললেন, "আপনে আইছেন ক্যান? আমারে তো পুলিশ ডাকতে হইব?" অনেক করে উত্তম রাজী করালেন। জর্জ শর্ত দিলেন দুটি। বিজ্ঞাপনে 'দেবব্রত বিশ্বাস' লেখা যাবে না। লিখতে হবে 'এক বিতর্কিত শিল্পী।' আর মঞ্চেও তাই ঘোষণা করতে হবে। তাই হল। উত্তমকুমার মাইকে বললেন, এবার গান
শোনাবেন এক বিতর্কিত শিল্পী। পর্দা উঠে গেল,জর্জ গান শুরু করলেন।"
রবীন্দ্রসংগীত গায়ক ও শিক্ষক হিসেবেই পরিচিতি দেবব্রত বিশ্বাসের। কিন্তু তিনি ভারতের গণনাট্য আন্দোলনেরও অন্যতম পুরোধা ও একজন বিখ্যাত গণসঙ্গীত গায়কও বটে। রাজা পঞ্চম জর্জের দিল্লি দরবারের অব্যবহিত পূর্বে জন্ম বলে তাঁর ডাকনাম রাখা হয় জর্জ। পরবর্তীকালে অনুরাগীমহলে তিনি জর্জ বিশ্বাস বা জর্জদা নামেও পরিচিত হন।
১৯২৮ সালে ব্রাহ্ম সমাজের একটি অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ'কে দেখেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। প্রথম দর্শনেই প্রেম। সেই থেকেই রবীন্দ্রসংগীত পাকাপাকি ভাবে তাঁর গলায়।
১৯৬৪ সাল থেকে বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতির সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার ভঙ্গি নিয়ে তাঁর মতভেদ শুরু হয়। মতভেদ তীব্র হলে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়াই বন্ধ করে দেন। ১৯৭১ সালের পর থেকে আর তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেননি। তাঁর শেষ রেকর্ড এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁরই রচিত ও সুরারোপিত একটি গান – “ক্যারে হেরা আমারে গাইতায় দিল না/আমি বুঝতাম পারলাম না/এই কথাডা তো ব্যাবাকের আসে জ়ানা/জ়াইন্যা হুইন্যাও কেউ কিসু রাও করে না।”
এই কারণে তথাকথিত সুশীলসমাজে বিশ্বভারতীও কম সমালোচিত হয়নি। ২০০১ সালে ভারতে রবীন্দ্ররচনার কপিরাইট বিলুপ্ত হলে তাঁর বহু অপ্রকাশিত ও অননুমোদিত গান প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতাতেই নিজের বাসভবনে মৃত্যু হয় দেবব্রত বিশ্বাসের। তাঁর আত্মজীবনী ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’ থেকে তাঁর জীবন ও বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর মতভেদের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
১৯৭৮ সালের ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রসদন চত্বরে আয়োজিত ‘কবিপ্রণাম’ অনুষ্ঠানে দেবব্রত বিশ্বাসের গান শোনার সুযোগ হয়েছিল। ওই একবারই। তখন তিনি খুব অসুস্থ। কী গেয়েছিলেন, মনে নেই। কিন্তু তখন থেকেই আমি তাঁর ফ্যান। (ওই অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কবিতা আবৃত্তিও শুনেছিলাম।)
(এখানে একটা পৃষ্ঠার কপি দেওয়া হল, যেখানে রবি ঠাকুর সম্পর্কে তাঁর মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।)

No comments:

Post a Comment