Monday, September 3, 2018

প্রসঙ্গঃ গীতা

প্রসঙ্গঃ গীতা
রাজা রামমোহন রায়ের জন্মের আগে ‘ভগবদ্গীতা’ বলে কোনও ‘গ্রন্থ’ দুনিয়ার কোত্থাও ছিল না। না সংস্কৃত, না বাংলা বা ইংরেজি কোনও ভাষাতেই নয়। মহাভারতের অংশ হিসেবে ‘কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন’ অবশ্য ছিল। কিন্তু আলাদা করে তার গুরুত্ব ছিল না।
গীতার জন্মদাতা চার্লস উইলকিন্স। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের আগ্রহে তিনি সংস্কৃত পুঁথি ঘেঁটে মহাভারতের আংশিক অনুবাদ করেন ইংরেজি ভাষায়। সেই আংশিক ইংরেজি পাণ্ডুলিপি ওয়ারেন হেস্টিংসের হাতে এলে তিনি কৃষ্ণার্জুনের কথোপকথনটুকু আলাদা করে একটা বইয়ের পরিকল্পনা করেন। এই বক্তব্যের সঙ্গে খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসের নাকি খুব মিল ছিল। এই ভাবেই হেস্টিংস-উইলকিন্স যুগলবন্দিতে জন্ম হয় ‘ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী’ ‘শ্রীমদভগবদ্গীতা’র।
চার্লস উইলকিন্স ১৭৪৯ সালে ব্রিটিশ মুলুকের সমারসেটে জন্মেছিলেন। ১৭৭০ সালে ভারতে আসেন তিনি। টাইপিস্ট ও অনুবাদক হিসেবে যোগ দেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র প্রেসে। দেবনাগরী লিপি ইত্যাদি নির্মাণের ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল বলে শোনা যায়। ১৭৮৬ পর্যন্ত ছিলেন এ দেশে। তার মধ্যেই উইলিয়াম জোনসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি করেন এশিয়াটিক সোসাইটি, ১৭৮৪ সালে। পরে সদস্যও হন ব্রিটিশ রয়াল সোসাইটির। বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা সম্পর্কে গভীর আগ্রহ ছিল চার্লস উইলকিন্সের।
চাকরির সূত্রে তিনি বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি ইত্যাদি ভাষা শিখেছিলেন। বারাণসীতে থাকাকালীন তিনি জনৈক ব্রাহ্মণ পণ্ডিত কালীনাথের সাহায্যে মহাভারত অনুবাদ করেন, যদিও তা শেষ করে যেতে পারেননি। ওই আংশিক অনুবাদে মধ্য থেকে একটা অংশ আলাদা করে ঝাড়াইবাছাইয়ের পর ১৭৮৫ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়ঃ “Dialogues of Kreeshna and Arjoon” যা পরে “Bhagvat-geeta” নামে প্রচারিত হয়। এর পর জার্মান, ফ্রেঞ্চ বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত হয়। বাংলায় অনুবাদও হয় চার্লস উইলকিন্সের করা ইংরেজি অনুবাদ থেকেই। বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ উইলকিন্সের অনুবাদ থেকেই ‘গীতাভাষ্য’ লিখেছিলেন, এটা নিশ্চিত।
‘গীতা’কে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বলা হয়। এই ‘বই’কে পাঠ্য করার কথা শোনা যায়। মাঝেমধ্যে জাতীয় গ্রন্থ করার কথাও ওঠে। সে সব করার সময় ‘গীতা’র প্রকৃত ইতিহাসটাও পাঠ্যে রাখার কথা ভাবা হবে তো?
sudip moitra

৩।৯।১৮

No comments:

Post a Comment