Wednesday, December 6, 2017

তসলিমা নাসরিন সুদীপ মৈত্র

Sudip Moitra লিখেছেনঃ
'' 'পদ্মাবতী' ছবি মুক্তির আগেই নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যাশিত! ছবির পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ইতিহাস বিকৃত করে 'পদ্মাবতী' নির্মাণের। তাও প্রত্যাশিত!
ছবিতে আলাউদ্দীন খিলজি ও পদ্মাবতীর প্রেম দেখানো হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্কের আগুনে উত্তপ্ত রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত হিন্দুরা। ছবির মুক্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু ছবি মুক্তি পাবে, এটাও প্রত্যাশিত।
ইতিহাস বিকৃতির প্রশ্ন উঠছে।
এখানে দুএকটা কথা বলা যাক।
প্রথমত, ‘আলাউদ্দিনের চিতোরগড় দুর্গ আক্রমণ ও জয়’ ছাড়া আর কোনো কাহিনিরই ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। ‘জওহর ব্রত’ ঐতিহাসিক, এটা ঠিক। কিন্তু পদ্মিনীর ক্ষেত্রে তেমন হয়েছিল কি না তার কোনো পাকা প্রমাণ মেলে না। সত্যি বলতে, আদৌ ‘পদ্মিনী’ বলেই কেউ ছিলেন কি না, থাকলেও তিনি আলাউদ্দিনের সমসাময়িক ছিলেন কি না এবং তাঁর ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স’ কী ছিল, তা নিয়ে ইতিহাস কিছু বলে না। কয়েকজন ইতিহাসবিদের লেখায় এসব পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তাঁদের তথ্যের উৎস কবি লেখকদের বর্ণনা।
দ্বিতীয়ত, নানা কারণে আজ পর্যন্ত ভারতের প্রকৃত ইতিহাস অবিকৃতভাবে লেখা হয়নি। যেটুকু হয়েছে, সেটুকুও তেমন প্রচারিত হয়নি। লোককথা, বিশ্বাস ইত্যাদি ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে পুরাণের সঙ্গে ইতিহাসের তফাৎ অনেকেই করতে পারেন না। এখানে রামায়ণ, মহাভারতকেও অনেকে ইতিহাস বলে মনে করেন। এই রকম একটা প্রেক্ষিতে, যেখানে ঠিকঠাক ইতিহাস লেখাই হয়নি, সেখানে ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গটাই তো হাস্যকর।
আর শেষে বলি, বিতর্কটা যতটা না ইতিহাসের মর্যাদা নিয়ে, তার চেয়েও বেশি আলাউদ্দিন-পদ্মিনীর প্রেম নিয়ে। তার চেয়েও বেশি হিন্দু-মুসলমানের প্রেম নিয়ে।
মানে এও এক ‘লাভ জেহাদ’! ''

No comments:

Post a Comment