Wednesday, December 6, 2017

বঞ্চনা প্রতি পদক্ষেপে

#বঞ্চনা
ব্যাংকে চেক জমা দিয়েছি।
কয়েক দিন বাদে ফোন। আপনার চেকে নাম ভুল আছে।
গেলাম ব্যাংকে। বললাম, এই নামেই গত তিন দশক ধরে চেক আসছে। গত মাসেও এসেছে। এবং ক্যাশও হয়েছে। এখন কী সমস্যা হল? ক্যাশিয়ার বললেনঃ আগের কথা ভুলে যান।
বুঝলাম। চেক ক্যানসেল করিয়ে নতুন চেক আনতে কালঘাম ছুটে গেল।
#বঞ্চনা
ব্যাংকে চেক জমা দিয়েছিলাম ড্রপ বক্সে। চেক গেল হারিয়ে। কাউন্টার ফয়েল’টা ছিল। দেখালাম। দেখল না। ‘আপনি যদি ঠিক ভাবে জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে আছে।‘ এক গ্রাহকের পরামর্শে, আমি বললাম, চলুন খুঁজি। ঘণ্টা চার পাঁচের চেষ্টায় চেক উদ্ধার হল যেখান থেকে, সেটাকে ওয়েস্ট পেপার বাক্স বললেও বাড়িয়ে বলা হবে। চেকটা ক্যাশ হল, তবে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে।
#বঞ্চনা
এ বার চেক জমা দিতে গিয়ে বললাম, সই করে দিন। বলল, নিয়ম নেই। আমি দেখালাম, স্লিপে পরিষ্কার লেখা সই করা ‘মাস্ট’। বলল, তাহলে আপনি হেড অফিসে যান। আমি ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাছে সই করিয়ে জমা দিলাম। বেশ কয়েক বার ঝগড়াঝাটি করে সই করিয়ে শেষে বিরক্ত হয়ে আবার পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরতে হল আমাকে।
#বঞ্চনা
জলের লাইন নেওয়ার ব্যাপারস্যাপার জানতে পুরসভায় গিয়েছি।
একজন পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, জলের লাইন নেবেন তো। সব করে দেব। এই যে, আপনাদের এলাকার প্লাম্বারের ফোন নম্বর নিন। এখনই ফোন করুন। কথা বলিয়ে দিচ্ছি। তারপর নিজেই নিজের ফোন থেকে ফোন করলেন। আমি বাঁধা দিয়ে বললাম, আমি শুনেছি পুরসভা থেকে একটা ফর্ম দেয়। সেটা ফিল আপ করে জমা দিতে হয়। অপেক্ষা করতে হয়। সেই পদ্ধতিটা জানতে চাইছি।
বলল, ওভাবে হবে না। কবে যাবে তার কি ঠিক আছে?
বললাম, দেখুন আমি বেনিয়মে কিছু করব না। বাড়তি পয়সা দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সংগতিও নেই। কোন দপ্তরে গেলে কাজ হবে সেটা কি বলতে পারবেন। দেখুন ওপরে গিয়ে।
#বঞ্চনা
ভোটার কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। নতুন করে করতে হবে। থানায় গিয়েছি ডায়েরি করতে।
ভোটার কার্ড’ যে ছিল, তার কী প্রমাণ?
এই যে ভোটার কার্ডের ফোটোকপি, দেখুন।
এটা যে ঠিক, তার কী প্রমাণ?
তারপর দলবল জুটিয়ে যেতে ডায়েরি হল।
#বঞ্চনা
রাতে বাড়ি ফেরার সময় টাকা ছিনতাই হয়েছে।
পুলিশ এফ আই আর নেবে না। কারণ, ছিনতাই হয়েছে তার কী প্রমাণ? ছিনতাই হলে কারা নিয়েছে, তাদের নামধাম বলতে হবে। ‘মিসিং’ বলে সাধারণ ডায়েরি করে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হল।
#বঞ্চনা
মেট্রোতে উঠতে যাব। দেখলাম স্টেশনের নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশ এক বয়স্ক লোককে ঘিরে ধরে যা তা বলছে। কিছুক্ষণ শুনে বুঝলাম, ভদ্রলোক তাঁর ব্যাগটা চেক না করিয়েই ঢুকে যাচ্ছিলেন। তাই ধরেছে। ভদ্রলোক বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁর এই চটের সাইড ব্যাগ নিয়ে তিনি বরাবরই যাওয়া আসা করেন। তিনি দেখেছেন, এই ব্যাগ পুলিশ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে না। সেই জন্যই বাহুল্য বোধে আজও তিনি চেকের জন্য ব্যাগটা এগিয়ে দেননি। বললাম, ব্যাগটা চেক করে নিলেই হয়। ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছেন কেন? আপনারা ঠিক করছেন না। অফিসিয়াল ডিউটি করছেন, অফিসিয়াল ডেকোরাম মানুন। তা ছাড়া, একজন ‘সিনিয়র সিটিজেন’এর সঙ্গে এভাবে কথা বলা মোটেই ভাল ব্যাপার নয়। এ বার ওরা আমায় নিয়ে পড়লেন। এক পুলিশ এসে খপ করে হাত চেপে ধরে বলল, চলুন। বললাম, খুব ভুল করছেন কিন্তু। হাতটা ছাড়ুন। আপনার কোনও রাইট নেই এটা করার। বলল, আমাদের রাইট শেখাচ্ছেন? চলুন আপনাকে রাইট দেখাব। বললাম, যা বলার এখানে বলুন। আজ তাহলে এটা নিয়েই ক্যাওস হোক। একজন বলল, আপনি কি সাংবাদিক? বললাম, সেটা একঘণ্টা বাদেই বুঝতে পারবেন। ‘বয়স্ক মানুষকে অযথা হয়রানি মেট্রোয়’, এক্ষুনি নিউজ অ্যালার্ট পাবেন আপনার ফোনে। সঙ্গে ছবি।
ছবি তুলেছেন নাকি? শুধু তুলিনি। মেন সার্ভারে জমাও হয়ে গিয়েছে। আমাকে কায়দা করে আটকে রাখলেও খবর আটকে থাকবে না।
অফিসে ঢুকতে ঢুকতে ভাবছিলাম, সত্যিই যদি চেপে ধরত, তাহলে কী হত? বুকের ঢিপঢিপটা আবার ফিরে এল!
#বঞ্চনা
র্যা শন কার্ড আছে। কিন্তু যে দোকানের কার্ড, সেটা উঠে গিয়েছে। র্যা শন নেওয়া বহুকাল বন্ধ। কিন্তু নব্য প্রজন্মের ডিজিট্যাল র্যা শন কার্ড করতে হবে। তাই পূর্বসূরিরও। না, কোথায়, কীভাবে সেটা হতে পারে, কোথা থেকে জানতে পারা যাবে, কেউ বলতে পারল না। অথচ ভোটের সময় এরাই নানা ছুতোয় দশবার করে হিসেব নিয়ে যায়।
#বঞ্চনা
হাত কাঁপে। লিখতে পারেন না। ডিজিট্যাল লেনদেনের কথা শুনেই তাঁর মুখ, বুক, হাত পা সহ গোটা শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকে গিয়ে সমস্যা বলায়, তারা বলল, কিছু করা যাবে না। আপনার ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। নাহলে টাকা তুলতে পারবেন না। স্বামী, ছেলে, মেয়ে, স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই। এক আধজন যারা আছে, তাঁরা অপেক্ষা করছে, কবে বুড়ি মরবে। কী করবেন এ বার ননীবালা দেবী?
#বঞ্চনা
বৃদ্ধ স্ত্রী অসুস্থ। অশীতিপর বৃদ্ধ গেলেন হাসপাতালে। ভর্তি করতে হবে। কিন্তু জায়গা কই! একে ওকে ধরে ভর্তি করা গেল। কিন্তু তিনি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তবে যে শুনছিলাম, সরকারি হাসপাতালে সব বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে!

No comments:

Post a Comment